সাধারণ মানুষ শুধু টিভিতে বা ইউটুবে বা ফেসবুকে যখন দেখে ইউরোপিয়ান কোনো দেশ বা আমেরিকা ইউক্রেনে উন্নত বিধ্বংসী স্মার্ট অস্ত্র পাঠিয়েছে তখন তারা শুধু তার দর্শনার্থী ও সুস্রোতা হয়ে সময় পার করেন । কিন্তু প্রশ্ন করেনা এই অস্ত্র দিয়ে কি ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে জয় লাভ করতে পারবে?
না, এসব স্মার্ট অস্ত্র পাঠিয়ে তারপর তা রাশিয়ার উপর বেপক ধ্বংসলীলা চালিয়েছে এসব বানোয়াট মিডিয়া প্রচার করে কোনোদিনও রাশিয়ার উপর জয়লাভ করা যাবেনা। এমনকি পুরো ফ্রান্সের বা কানাডার সমস্ত অস্ত্র পাঠিয়েও রাশিয়ার বিরুদ্ধে জয়লাভ করা যাবেনা। এমনকি এসব দেশের আস্ত সামরিক বাহিনী পাঠিয়েও রাশিয়ার বিরুদ্ধে জয় লাভ করা যাবেনা। কারণ রাশিয়া সামরিকভাবে একটি প্রবল পরাক্রমশালী একটি পরাশক্তি। যদিও বর্তমানে রাশিয়ার সামরিক সদস্য সংখ্যা ১২ লাখের মতো, কিন্তু ক্রাইসিস টাইমে প্রয়োজনে রাশিয়া এক কোটিরও বেশি সংখ্যার সামরিক বাহিনীর সদস্য গড়ে তুলতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এমন নজির আমরা দেখেছি। আমরা দেখেছি কিভাবে হিটলারের ভয়ঙ্কর নাজি জার্মানি রাশিয়ার অর্ধেকেরও বেশি এলাকা দখল করে রাজধানী মস্কো পর্যন্ত পৌঁছানোর পরও পালিয়ে যাওয়া রাশিয়ান বাহিনী কিভাবে অজ্ঞাত স্থান থেকে ট্যাঁক ও বিমান সমর্থিত মিলিয়ন মিলিয়ন সৈন্যবাহিনী ঝড়ের বেগে উদয় হয়ে হিটলারের নাজিবাহিনীকে হটিয়ে দেয়, বার্লিন পুরোটা দখল করার উপক্রম করে, ও হিটলারের পতন ঘটে , ঐসময় আমেরিকা নেতৃত্বে এলায়েড বাহিনীও রাশিয়ার একক পরাশক্তি দেখে বিচলিত বোধ করে।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, কেন ইউরোপীয়ানরা ও আমেরিকানরা অস্ত্র সাপ্লাই করছে ইউক্রেনের মাটিতে? কি তাদের উদ্দেশ্য? রাশিয়াকে পরাজিত করা? কিন্তু তাতো অসম্ভব। তাহলে কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি তৈরী করা? নাকি পুতিনকে উৎখাত করা?
পশ্চিমারা যদি ভেবে থাকেন পুতিনকে সরালেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে তাহলে ভুল হবে। পশ্চিমাদের এ ধরানোর কিছু প্রচার আমাদের দেশের কিছু মিডিয়া ফলাও করে প্রচার করে থাকে। কিন্তু একক পুতিনের জন্য এ যুদ্ধ হচ্ছে ভাবলে বড়ই খাটো দৃষ্টিপাত হয়ে যাবে কারণ এ যুদ্ধ ইউক্রেন ও রাশিয়ার বহু দিনের মনস্তাত্তিক ও লেনদেনের টানাপোড়নের বহিঃপ্রকাশ। তাছাড়া ইউক্রেনে অনেক রাশিয়ান বংশোভূত লোক রয়েছে। আবার রাশিয়ার হুকুমতবিরোধী অনেক ইউক্রেনীয় স্বাধীনচেতাও রয়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেনের ভিতর অনেকেই মনে করেন পুঁজিবাদী শক্তি পশ্চিমা বলয়ের যুগের পর যুগের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধ। আর তাৎপর্যের বিষয় হচ্ছে এ ধারণা পোষণ করেন বেশিরভাগ রাশিয়ান নেতৃত্ব ও সমরবিদ। টার্নিং পয়েন্ট হচ্ছে এখানেই। তাই পুতিনকে সরালে সমস্যার সমাধান হবেনা।
পশ্চিমাদের লক্ষ্য হয়তো সরাসরি যুদ্ধে না গিয়ে ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়াকে পংগু করে পুতিনকে ক্ষমতার গদি থেকে হটানো। অন্যভাবে উভয় রাশিয়া ও পশ্চিমা বলয় জানে পারমাণবিক যুদ্ধ বাধলে কেউই জয়ী হবেনা। আর একটি অপারমানবিক কিন্তু প্রচলিত বিশ্ব যুদ্ধ বাধলে পুতিন কিন্তু এক লড়বেননা বরং তার অর্থৈনিতক দুর্বলতা পার করতে আরব বিষয়ের দেশগুলোকে নিজের পক্ষে আনবে। এমনকি বিশ্বের দশম মিলিটারি পাওয়ার তুর্কিকে পক্ষে আন্তে পারে। যদি এমন হয় যে তুর্কি পুতিনের পক্ষে চলে এসেছে তাহলে কিন্তু পরিস্থিতির দৃশ্যপট পাল্টে যাবে। কারণ তুর্কি কিন্তু একসময় অটোমান সাম্রাজ্যের অধিকারী ছিল ও তার ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অক্ষশক্তির নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা। সবচেয়ে বড় ক্রাইসিস [Crisis] হবে এর ফলে ন্যাটোর মধ্যে ফাটল ধরানোর হুমকি তৈরী করবে কারণ তুর্কি NATO সদস্য একটি দেশ।