সিলেটের রাতারগুল । এটাকে বাংলাদেশের আমাজন বলা হয়ে থাকে। অদ্ভুত সুন্দর রাতারগুল প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমি। প্রকৃতি বাংলাদেশের এই ছুটো খণ্ডটিকে এক মায়াবী রূপে সাজিয়েছে। এখানে হিজল তমাল ও অন্যান্য মেনগ্রোভ জাতীয় গাছগুলোর অনিন্দ সুন্দর সবুজ সজীবতা যে কোনো দর্শনার্থীর প্রাণ সুবাসিত শীতল করে তুলবে। এ বনে জলসহিষ্ণু প্রায় ২৫ প্রকার উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায়।
রাতারগুলকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের ছোট ছোট ব্যবসার সুযোগ হয়েছে। রাতারগুলে ভ্রমণের একমাত্র উপায় নৌকা। নৌকাঘাটের ব্যবস্থাপনা ও নৌকা ভাড়া দিয়ে স্থানীয় কিয়দাংশের রোজগারের যোগান হয়েছে। আবার, যে ঘাট থেকে নৌকো ছারে ওখানে বেশ কিছু ট্যুরিস্টদের প্রয়োজোন এমন জিনিস নিয়ে দোকানিরা পসরা সাজিয়েছেন। এছাড়া হালকা খাবারের কিছু দোকান গড়ে উঠেছে। যারা নৌকা চালান দর্শনার্থী নিয়ে তাদেরও ভালো উপার্জন হয়ে থাকে।
রাতারগুল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সোয়াম্প ফরেস্ট (জলাভূমি বন)। স্থায়ীভাবে বা মৌসুমে মিষ্টি জলে ডুবে থাকা বনকে সাধারণত সোয়াম্প ফরেস্ট বলা হয়। এগুলো সাধারণত নদীর নিম্ন প্রান্তে এবং মিঠা পানির হ্রদের আশেপাশে দেখা যায়। বাংলাদেশের এ জলাভূমি বনটি সিলেট জেলার গোয়াইন ঘাট উপজেলার মধ্যে পড়ে। এটি সিলেট শহর থেকে মাত্র ২৬ কিলোমিটার দূরে। সিলেট শহরের অম্বরখানা পয়েন্টর কাছে বিমান বন্দর রোডের মুখ থেকে সিএনজি ভাড়া করে খুব সহজেই রাতারগুল যাওয়া যায়। রিসার্ভ সিএনজি নিলে একবারে নৌকাঘাট পর্যন্ত যাওয়া যায়। লোকাল সিএনজি হিসাবে গেলে রাতারগুল বাজারঘাট পর্যন্ত যেতে পারবেন, এরপর নৌকাঘাট পর্যন্ত অটোতে যেতে হবে। সকালে গেলে দিনে দিনে মানে সন্ধ্যার আগেই ফেরা যায়।
পর্যটকরা সাধারণত বর্ষাকালে যেতে চান, যেহেতু বর্ষায় রাতারগুলের জলাশয়গুলো কানায় কানায় পূর্ণ থাকে। তাছাড়া সবুজ চির নবীন গাছগুলো বর্ষার সিক্ততায় তাদের প্রকৃত আদিম রূপ ধারণ করে। বর্ষায় গাছ-পাতার ঘনত্ব এতো বেড়ে যায় যে কিছু কিছু জায়গায় গাছের পাতা ভেদ করে সূর্যের আলো পানিতে এসে পৌঁছুতে পারেনা। শীতের দিনেও কেউ কেউ যান। সেক্ষেত্রে পানি কম থাকে, কিন্তু বন তখন অন্য রূপ ধারণ করে। গাছের পাতাগুলো একটু হলদেটে হয়ে থাকে, তার উপর শীতের নানারকম অতিথি পাখির সমারোহ ভ্রমণপিয়াসদের চোখ জুড়িয়ে দেয়। এ বনে নানা বৈচিত্রের বক পাখি, মাছরাঙা, পানকৌড়ি, বালিহাঁস, চিল, ধনেশ, মোহনচূড়া, হাটিটি, চোখগ্যালো, কাঠঠোকরা ও নানা প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দেখা যায়। বন্য প্রাণীদের মধ্যে উদবিড়াল, কাঠবিড়ালি, এমনকি গভীরে মেছোবাঘ পর্যন্ত দেখা যায়। শীতকালে বনের গভীরে ঘুরতে অজানা বিপদের ভয় কম মনে হয়। তাছাড়া বর্ষা কালের মতো তখন গাছে সাপ-বিচ্ছু ইত্যাদির ঝুঁকিও থাকেনা।
এ বনের নিরাপত্তা সরকারিভাবে বনবিভাগের কর্মকর্তাদের। কিন্তু আদলে নিরাপত্তা বিধান করেন রাতারগুল কেন্দ্রিক স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। নৌকার মাঝিরাও নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে প্রচেষ্টা রাখেন। তারা মনে করেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে তাদের আয় রোজগার ভালো হবে। অন্নদিকে ভ্রমণকারীদের বেক্তিগত ভাবে নিরাপত্তার জন্য লাইফ-জ্যাকেট, টর্চ, ছাতা এবং ইমার্জেন্সি কন্টাক্ট লিস্ট সাথে রাখা প্রয়োজন।
সব ঋতুতেই ভ্রমণে রাতারগুল অনন্য একটি আদর্শ স্থান পর্যটকদের জন্য। সবচেয়ে বড় কথা, সিলেট শহরে থেকেই এ বনে ভ্রমণ করা যায়। তার মানে সিলেটের ভালো হোটেলগুলোতে থাকার সুযোগটিও থেকে যাচ্ছে।