আমেরিকা যখন নিউ-মেক্সিকোতে পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন করে ফেলে, তখন ইতিমধ্যে হিটলারের নাজি জার্মানি মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে ফেলেছে। এরপর জার্মানিতে বোমা ফেলার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় l এরপরও যদি আমেরিকা জার্মানিতে বোমা ফেলতো, তাহলে ওখানে জার্মান শহরগুলো দখল করে রাখা মার্কিন ও মিত্র বাহিনীর বন্ধু সৈন্যরাই মারা যেত l তাহলে, এটা হতো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ও সামরিক বোকামি।অন্যদিকে জার্মানির আরেক পক্ষশক্তি (ইতিহাসে যা অক্ষশক্তি নামে পরিচিত) জাপান তখনও মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলো । আর জাপানেরই সবচেয়ে বড় শত্রু ছিল আমেরিকা । তাছাড়া জাপানই আমেরিকার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছিল (যেমন: শুরুতে আমেরিকার বৃহত্তম নৌঘাঁটি পার্ল হারবারে অকস্যাৎ কাপুরোষিচিত বিমান হামলা করে জাপান শতাধিক জাহাজ-সামরিক স্থাপনা ধ্বংস ও বহু সৈন্যর মৃত্যু ঘটায়)।
নিম্নের ছবি: ইউরোপ জার্মানিকে পরাজিত করার পর আমেরিকার সৈন্যরা
Attribution: United States Department of Energy, Public domain, via Wikimedia Commons
নিম্নের ছবি: ইউরোপে মিত্রদের বিজয় উদযাপনের জন্য ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ভারী এন্টি-এয়ারক্রাফট সালভ ছুড়ে
Attribution: No 5 Army Film & Photographic Unit, Wilkes (Sgt), Public domain, via Wikimedia Commons
যুদ্ধের শেষ দিকে জার্মানি আত্মসমর্পণ করলেও জাপান মরিয়া হয়ে লড়ছিল l জাপান মরণ কামড়ের নেশায় মত্ত হয়ে উঠে । জাপানি বৈমানিকের ওসামা বিন লাদেনের আল কায়েদার পদ্ধতিতে (Suicidal Air Mission) বিমান উড়িয়ে নিয়ে সেই বিমান আমেরিকার নৌবহরগুলুতে ভূপাতিত করার মধ্য দিয়ে আত্মঘাতী হামলা চালাচ্ছিল। এ অবস্থা মার্কিন সমরবিদদের ভাবিয়ে তুলে । তাছাড়া যদিও সেই শেষ পর্যায়ে জাপানকে আমেরিকার নৌবহরগুলু ঘিরে ফেলেছিলো কিন্তু নৌবহরগুলুতে থাকা মেরিন সৈন্যরা জাপানের মাটিতে ল্যান্ড করতে পারছিলোনা । আর ল্যান্ডিং ছাড়া যুদ্ধ জয়ের পতাকা উড়ানো সম্ভব হয়না । আর জাপান কোনো ভাবেই আত্মসমর্পণ করছিলোনা । অপরদিকে আত্মঘাতী হামলা মার্কিন ক্ষতি ও সৈন্য ক্ষয় বাড়িয়ে চলছিল । এ থেকে উত্তরণের এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ ভয়ঙ্কর যুদ্ধের ইতি টানার জন্য US President হারি ট্রুম্যান জাপানে পারমাণবিক বোমা ফেলার সিদ্ধান্ত নেন।মার্কিন B2 বিমান থেকে যথাক্রমে ৬ ও ৯ আগস্টে (১৯৪৫) জাপানের উপর দুটি শহর হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা ফেলে শহর দুটিকে ধুলোয় পরিণত করে । নিমিষে লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করে, পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের হাজারো মানুষের শরীর আগুনে ঝলসে যায়, রেডিয়েশন বিক্রিয়ায় দেহ বিকৃত বা পঙু হয়ে যায় । এরপরই ১০ অগাস্ট (১৯৪৫), জনগণের অসহনীয়তার কথা ভেবে জাপান সম্রাট হিরোহিতের সিদ্ধান্তে জাপান সরকার আত্মসমর্পনের ঘোষণা দেয় ।
নিম্নের সুমিটারু তানিগুচির পিঠের আঘাতের এই ছবিটি ১৯৪৬ সালের জানুয়ারিতে একজন ইউএস মেরিন ফটোগ্রাফার তোলেন।
This image or file is in the public domain because it contains materials that originally came from the United States Marine Corps. As a work of the U.S. federal government, the image is in the public domain
নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণে ঝলসে যাওয়া কিন্তু অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া শিশু তানিগুচিকে ২ দিন পর উদ্ধার করে পরবর্তীতে অমুরা নেভি হাসপাতালে ৭ মাস চিকিৎসা করে সুস্থ করা হয় l