আসলে পার্ল হারবারে বিমান হামলা হয়েছিল l শুধু বোমা হামলা হয়েছিল কথাটি এভাবে হবেনা l তাছাড়া বোমা হামলা কি দিয়ে হয়েছিল, এ আরেকটি প্রশ্ন এখানে উঠে আসে। কারণ পার্ল হারবার সুদূর প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বিপ l অতোদূরে মিসাইল বা রকেট হামলা করার মতো আন্তঃমহাদেশীয় দীর্ঘ পাল্লার প্রযুক্তি তখনো মানুষ বের করতে পারেনি l মোদ্দা কথা, পার্ল হারবারে বিমান হামলা হয়েছিল l এবং তা করা হয়েছিল বিমান থেকে টরপেডো, কামান, বোমা, ও মেশিন গান দিয়ে গুলি নিক্ষেপের মাধ্যমে l
আমেরিকার আটলান্টিক লিড শিপ ইউএসএস পেনসিলভানিয়া (বিবি-৩৮)জাপানের বোমা হামলায় সেদিন দুমড়ে মুচড়ে যায়
Attribution: Allan C. Green 1878 – 1954, Public domain, via Wikimedia Commons
বিশ্বযুদ্ধের আগে আমেরিকার পানিসীমায় ইউএসএস পেনসিলভানিয়ার অক্ষত ছবি
Attribution: USN, Public domain, via Wikimedia Commons
বস্তুত, পার্ল হারবারে হামলার আগে আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (WWII) তখনো সরlসরি যোগ দেয়নি l এ হামলার পরেই আমেরিকা WWII-তে সরাসরি জড়িয়ে পরে এবং জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডিক্লারেশন দেয়।
পার্ল হারবার হামলা করে জাপান শুরুতে জয়ের সাধ কিছু দিনের জন্য পেলেও এ হামলায় পরিণতিতে জাপানের শুধু পরাজয় নয়, ধ্বংসও ডেকে এনেছিল l যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে আমেরিকা জাপানের দুটি শহরে পারমাণবিক হামলা করে মুহূর্তের মধ্যে শহর দুটো ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। কয়েক দশক ধরে জাপান পরাজয়ের শাস্তি পেয়েছে l শুধু তাই নয়, আজও জাপানের ভূমি থেকে আমেরিকা তার ঘাঁটি সরিয়ে নেয়নি l যদিও পারমাণবিক হামলা পরবর্তীতে আমেরিকার বিরুদ্ধে শান্তিকামী মানুষের মধ্যে অনেক সমালোচনা ও ঘৃণার জন্ম দেয়, কিন্তু এটাই সত্য যে পার্ল হারবার হামলা জাপানের মাটিতে পারমাণবিক হামলার সিদ্ধান্ত নিতে অনেক প্রভাব রেখেছিলো l
WWII চলা কালে জাপান তার প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও পূর্বফ্রন্টের প্রতিপক্ষ আমেরিকাকে আগেভাগে ঘায়েল করতে আমেরিকার মহাসাগরীয় জাহাজ ও বিমান ঘাঁটি পার্ল হারবারে অকষ্যাৎ জঙ্গি-বিমান হামলা করে l বিনা উস্কানিতে এ ধরনের হামলাকে সিকিউরিটি স্টাডিজ এর ভাষায় ইংরেজিতে Surprise Attack বলে l পার্ল হারবার, হাওয়াই আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় 2,000 মাইল দূরে এবং জাপান থেকে প্রায় 4,000 মাইল দূরে প্রশান্ত মহাসাগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। কেউ বিশ্বাস করেনি যে জাপানিরা হাওয়াইয়ের দূরবর্তী দ্বীপগুলিতে আক্রমণ করে যুদ্ধ শুরু করবে।অধিকন্তু, আমেরিকান গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে কোনও জাপানি আক্রমণ দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের নিকটবর্তী (তুলনামূলক) ইউরোপীয় উপনিবেশগুলির একটিতে ঘটবে: ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ, সিঙ্গাপুর বা ইন্দোচীনে ।
যুদ্ধ জাহাজ নেভাদা-ক্লাস ইউএসএস ওকলাহোমা (বিবি-৩৭) পার্ল হারবারে জাপানি হামলায় ডুবে যায়
Attribution: National Museum of the U.S. Navy, Public domain, via Wikimedia Commons
Attribution: National Museum of the U.S. Navy, Public domain, via Wikimedia Commons
১৯৪১ সালের ৭ ই ডিসেম্বর রবিবার সকাল আটটার দিকে শত শত জাপানী যুদ্ধবিমান অকষ্যাৎ হামলার জন্য পার্ল হারবার ঘাঁটির দিকে নেমে এসেছিল l সেখানে তারা ৮টি যুদ্ধজাহাজ এবং প্রায় ৩০০-এরও বেশি বিমান সমেত প্রায় ২০ টি আমেরিকান নৌযানকে ধ্বংস বা ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছিল। বেসামরিক ব্যক্তিরা সহ এই হামলায় ২৪০০ এরও বেশি আমেরিকান মারা গিয়েছিল এবং আরও ১ হাজারের মতো মানুষ আহত হয়েছিল। এই হামলার পরদিন, রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট (FDR) কংগ্রেসকে জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে বলেছিলেন l তিনি তার বিখ্যাত ‘পার্ল হারবার বাণীতে’ বলেছিলেন এটি বিনা প্ররোচনায়, বিনা ঘোষণায় জাপানের পক্ষ থেকে একটি প্রতারণামূলক হামলা।
১৯৪১ এর ৭ই ডিসেম্বরের দিন ইউএসএস নেভাদা (বিবি ৩৬) নামের এই যুদ্ধ জাহাজটি জাপানি বোমায় জ্বলতে থাকে
Attribution: National Museum of the U.S. Navy, Public domain, via Wikimedia Commons
আবার কেউ পার্ল হারবারে পারমাণবিক বা নিউক্লিয়ার হামলা হয়েছিল এ কথাও বলে থাকেন। পারমাণবিক হামলা হয়েছিল আমেরিকা এবং জাপানের মধ্যে শুরু হওয়া যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে l পার্ল হারবারে হামলা হয়েছিল ১৯৪১ সালে l আর নিউক্লিয়ার হামলা হয়েছিল তার ৪ বছর পর দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ১৯৪৫ সালে। এ হামলা হয়েছিল মূল জাপানের ভূখণ্ডে হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে, যেটি আমেরিকা জাপানের উপর করেছিল l নিউক্লিয়ার অস্ত্রের হামলায় যে আগুনের ঝর তৈরী হয় তাতে মুহূর্তের মধ্যে লক্ষ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়, শহর দুটি ধুলোয় মিশে যায়, আশে পাশের অঞ্চলের আরো লক্ষাধিক মানুষ শুধু পারমাণবিক রেডিয়েশনের তেজস্ক্রিয়তায় গুরুতর ভাবে ঝলসে যান, মারাত্মক ভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন । একসঙ্গে লাখ লাখ মানুষের এভাবে মৃত্যু ও আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া ছিল অকল্পনীয়।এরপরেই জাপান আত্মসমর্পণ করে l