সবচেয়ে সহজ ইনকাম? জানার এ বিষয়ে আগ্রহ শুধু এদেশে নয়, পৃথিবীর প্রতি দেশে। সব মানুষই চায় কত কম পরষিশ্রমে কত টাকা উপার্জন করা যায়! আমাদের দেশ একটি উন্নয়নশীল ও প্রচন্ড রকমের জনবহুল দেশ হওয়ায় এখানে উপার্জন বেশ কঠিন। মাস্টার্স পাশ করা একজন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ধারিও মাসে মাত্র ১৫ হাজার টাকা ইনকাম করেন এমন অনেক জায়গাতেই আছে। আমাদের দেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশ হওয়ায় এখানে লেপখাপড়ার মানের প্রতি যেমন একদিকে ক্ষমতাধরত গোষ্ঠীগুলো দৃষ্টি দেয়না, তেমনি ডিগ্রি ধারীদের চাকরি নিচিতকরণের কোনো সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগ তেমন একটা নেই।
নানা কারণে, প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একজন স্নাতকোত্তর লোকের চেয়ে একজন অশিক্ষিত লোকের মাসিক উপার্জন এদেশে বেশি। অথচ এই স্নাতকোত্তর ব্যক্তিটি জীবনের বিরাট একটা সময় বিনিয়োগ করেছেন প্রথম শ্রেণী থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জনের জন্য। খুব হতাশার সাথে দেখা যায় যে ডিগ্রিধারীদের যথাযথ মূল্যায়ন যেমন নেই, তেমনি তাদের চাকরির জন্য নতুন পরিবেশ ও পরিপ্রেক্ষিতও তৈরী হচ্ছেনা। কেউ দেশের ও পরিবারের মায়া ত্যাগ করে জীবিকার তাগিদে প্রবাসে চলে যাচ্ছেন। মাটি ও মায়ের মায়া ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিবার ও পরিজনের ভরণ পুষনের জন্য অনেক মাস্টার্স পাশ করা ভাই চায়ের দোকান দিচ্ছেন, লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ওবার বা পাঠাও চালাচ্ছেন ও প্রতিদিন রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, ট্রাফিক জ্যামে যুদ্ধ করে হাড়ভাঙ্গা খাটুনির পর মাসে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা উপার্জন করছেন । যারা ধার কর্জ করে পুঁজির ব্যবস্থা করতে পারছেন, তারা ১৫ – ২০ লক্ষ্য টাকা বিনিয়োগ করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নতুন কাঠামোর ফাস্টফুড রেস্তরাঁ করছেন, এগ্রো ফার্ম করছেন, কৃষি কাজ করছেন। শিক্ষিত ও অশিক্ষিতের ইনকামের অসঙ্গতি ও বিশৃঙ্খলা দেশে বেরেই চলছে।
সমাজে অরাজগতা ও অসঙ্গতির এ প্রেক্ষাপটে দেশের পর্যটন নগরী কক্সবাজারের দৃশ্য সম্পূর্ণ আলাদা। এখানে ফেরি করা লোকদের কথা না হয় বাদ দেয়া গেলো যেহেতু তারা বেশি রোজগার করলেও পরিশ্রম করে করেন। কিন্তু এখানে বিনা বিনিয়োগে, সামান্য পরিশ্রমেই অশিক্ষিত ক্যামেরাম্যানরা মাসে অর্ধ লক্ষ্য থেকে ২ লক্ষ্য টাকা ইনকাম করে থাকেন।
কক্সবাজার কলাতলী ডলফিন পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবনী পয়েন্ট, হিমছড়ি, ইনানী, কাঁকড়ার বিচ, পাটুয়ারটেক ইত্যাদি এলাকাতে তথাকথিত ক্যামেরাম্যানেরা সহজেই লক্ষ টাকা ইনকাম করছেন। এরা দাবি করে এদের কাছে টুরিস্ট পুলিশের ছাড়পত্র আছে, কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃপক্ষের কাছ থেকে মাসিক লক্ষ টাকা কর প্রদান করে লাইসেন্স করা আছে। এরা প্রতিদিন সামান্য পরিশ্রমে শুধু ছবি তোলার পেশায় নিয়োজিত। এদের কাছ থেকে উঠতি বয়সী তরুণ তরুণীরা ঝোকের বসে বা খেয়ালি হয়ে ছবি তুলে থাকেন। কয়েকটি ছবি তোলা দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও এই শ্রেণীর তথাকথিত ক্যামেরাম্যানেরা কয়েকশো থেকে কয়েক হাজার ছবি স্পীডশট অপশনে তুলে ফেলেন এবং এরপর তরুণ তরুণীদের মোবাইল ডিভাইসে ট্রান্সফার করতে বলেন। এরপর এতো ছবি টুরিস্ট তরুণ তরুণীদের ডিলেট করা সম্ভব হয়না। তখন ৫০০ শত থেকে ১ হাজার ছবি প্রতি ছবি ৩ থেকে ৫ টাকা দরে উঠতি বয়সী টুরিসদের ২,৫০০ থেকে ৩,৫০০ এমনকি ৪,০০০ টাকা করে দিযে পকেট খালি করে অসহায় অবস্থায় বাড়ি ফিরতে হয়। এই চক্র সংঘবদ্ধ। একজন ক্যামেরাম্যান ১০০ এর নিচে ছবি তোলার নিয়ম নেই, ৩ টাকা রেটে কমে নিয়ম নেই, লাইসেন্সের মহাজন, কতৃপক্ষকে দিন হিসাবে টাকা দিতে হয়, চার্জ দিতে হয় ইত্যাদি বলে প্রভাব এমনকি হুমকির পরিবেশ সৃষ্টি করে। এরপর এদের সঙ্গী-সাথী অন্যান্য চক্রের লোকেরা এসে তার পক্ষে সাফাই গাইতে শুরু করে। আবার তরুণ তরুণীরা বেশি সময় ধরে সাগর পারে হেটে গিয়ে ছবি তুললে এরা পার ডে হিসাবে চার্জ করে যেমন আধা বেলা ২,০০০ টাকা, সারা বেলা ৪,০০০ টাকা। এসব তথাকথিত ক্যামেরাম্যানেরা আসলে অপেশাদার, অনারী, লাইসেন্স বিহীন, কার্যালয় বিহীন। এদের ধরার বা নিয়ন্ত্রণ করার কেউ নেই (যদিও বিশাল বিশাল বিল্ডিং নিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও প্রশাসনের কতৃপক্ষ বসে আছেন) । যদি ক্যামেরামেনদের একজন দিনে সর্বনিম্ন ২,০০০ টাকা উপার্জন করে তাহলে মাসে ৬০,০০০ টাকা ইনকাম যেখানে বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকা শহরে অনেক মাস্টার্স পাশ করা ছেলে সারা মাস কর্পোরেট জব করে মাসে মাত্র পান ১৫,০০০ টাকা। অধিকন্তু ক্যামেরামেনদের সরোজমিনে জিজ্ঞেস করলে এরা মাসে ২ লক্ষ্য টাকাও ইনকাম হয় বলে প্রকাশ করেন। অন্যদিকে, প্রকৃতপক্ষে এই সহজ ইনকাম ট্যাক্স, ভ্যাট, লাইসেন্স, কার্যালয় ও প্রোফাইল বিহীন।