আমরা ইন্টেলিজেন্স, এস্পিওনাজ বা গুপ্তচরবৃত্তি, গোয়েন্দাবৃত্তি, কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ও স্প্যাইং এ বিষয়গুলো এলোমেলো করে ফেলি। ইন্টেলিজেন্স বা এস্পিওনাজ সাধারণত রাষ্ট্রীয় স্বার্থে পরিচালিত হয়। অপরদিকে স্প্যাইং একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে অন্য সংগঠন বা কার্যালয়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়। এস্পিওনাজ কাভার-এ হয়ে থাকে। ইন্টেলিজেন্স কাভার বা ক্ল্যান্ডেস্টাইন দুভাবেই হতে পারে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সাধারণত গোয়েন্দাবৃত্তি প্রকাশ্যে ও পরিচয় দানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। প্রভাব, ভয় ভীতি প্রদর্শন, জানান দিয়ে অপারেশন চালালে শত্রু বা অপরাধীর বিরুদ্ধে বেশি সাফল্য আসবে এ প্রেক্ষাপটে এ মেথড অনুসরণ করা হয়।
আমাদের এ জগতে যে বিভিন্ন টাইপের Security Monitoring & Measures একটিভিটি ও সক্রিয় করা করা হয় তার মধ্যে প্রচলিত ধারার মধ্যে আছে রেকোননাইসেন্স, ইভ্স ড্রপিং, টেইল, ইলিনট, ফিলিংন্ত, হিউমিন্ত ইত্যাদি।
উন্নত দেশের এজেন্টরা সাধারণত কভার্ট বা ক্ল্যান্ডেস্টাইন আকারে তাদের ইন্টেলিজেন্স বা স্প্যাইং তৎপরতা চালান। কিন্তু আমাদের দেশে প্রায় সময় ইন্টেলিজেশন এজেন্সির বেক্তিরা পরিচয় দিয়ে থাকেন বা জাহির করতে পছন্দ করেন। আমাদের দেশের নিজেদের হিরো করে বা বড়াই করে উপস্থাপন করার যে সাধারণ ধারা আছে, উনারা এ কালচারের মধ্যে চিন্তা করেন যা আসলে প্রফেশনাল কারণে পরিহার করতে হবে।
আরো একটি বিষয় আমাদের এজেন্টরা ফেইসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজেদের হিরো রূপে জাহির করে ফেলেন। এটাও পরিহার করতে হবে। আমাদের সংস্থাগুলোর দক্ষতা বাড়াতে ইন্টেলিজেন্স ও স্প্যাইং এর উপর আরো ট্রেনিং ও স্টাডি করতে হবে। এছাড়া যথেষ্ট একুইপমেন্ট ও ইন্টেলিজেন্স টুলস দিয়ে এজেন্টদের সজ্জিত করা জরুরি।
আমাদের দেশের এজেন্টরা অনেক সফল প্ল্যান ও প্রোগ্রাম এর গৌরবের অধিকারী। অনেক অপচেষ্টা তারা রুখে দিয়েছেন যা ক্লাসিফাইড হয়ে আছে। কারণ এগুলো পাব্লিসাইজ করা পলিসিতে পড়েনা। তবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের [ডিমপি /DMP] কাউন্টার টেরোরিজম [CTTC বা Counter Terrorism & Transnational Crime] এর সাফল্য পাব্লিসাইজড। আমরা দেখেছি CT ইউনিটের নেতৃত্বে বাংলাদেশের এন্টি মিলিট্যান্ট জয়েন্ট ফোর্স কিভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, মৌলভীবাজার, ঢাকার শ্যামলীতে সফল অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গীদের নির্মূল করে দেয়। আমরা দেখেছি CTTC এর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী নারায়ণগঞ্জে অপারেশন চালিয়ে জঙ্গি শীর্ষ নেতা ও হলি আর্টিসান এট্যাকের মূল হত্যা ও মাস্টার মাইন্ড কানাডিয়ান নাগরিক তামীম চৌধুরীকে নির্মূল করে। আজ বাংলাদেশ জঙ্গি আতঙ্ক মুক্ত। আর এ সাফল্যের মুলে রয়েছে আমাদের গোয়েন্দা বাহিনীগুলোর সঠিক বার্তা। জঙ্গি বিরোধী প্রত্যেকটি অপেরেশনে আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী গোপন বার্তা না দিলে অভিযানগুলো পরিচালিত করা সম্ভব হতোনা।
অন্যদিকে গোয়েন্দা বাহিনীগুলোর বের্থতাও আছে। গুলশানের হোলি আর্টিসানে হামলা হবে এটার ইন্টেলিজেন্স অর্জন না করা ছিল একটি ব্যর্থতা। বঙ্গবন্ধু হত্যা, প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যা ইত্যাদিতেও আগাম বার্তা অর্জনে ব্যর্থতা ছিল। তবে সামগ্রিক রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় অবস্থার কারণে অনেক সময় সফল হওয়া যায়না। যেমন পরাশক্তির দেশ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যা, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিআয়ুল হত্যা, প্রেসিডেন্ট লিঙ্কন হত্যা, এবং মার্টিন লুথার কিংয়ের মত নেতা হত্যার মত ঘটনা ঘটেছে। আমরা আরো দেখেছি ফিলিস্তিন প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যু স্বাভাবিক ছিলোনা। তাকে তেজস্ক্রিয়তার মাধ্যমে ধীরে ধীরে হত্যা করা হয়। কিন্তু PLO এর এজেন্টরা তা ধরতে পারেনি।
একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি । একবার আমার এক বিদেশী কলিগ [military attache থেকে আসা] খেপে গিয়ে এজেন্টদেরকে রাস্তার ওপার থেকে ডাক দিলেন। কারণ উনারা রাস্তার এপাশ থেকে আমাদের গেটের ভিতর দিয়ে কে আসছে, কে যাচ্ছে এ ছবি তুলছিলেন প্রকাশ্যে! ডাকে সারা দিয়ে তারা আসলেন [সাথে আরো ২টি গোয়েন্দা শাখার লোক ছিলেন] প্রশ্ন করা হলে তারা উত্তর করলেন তারা কোন কোন গোয়েন্দা সংস্থা থেকে এসেছেন। উত্তর শুনে বিদেশী কলিগ হেসে দিলেন। তিনি কেন হেসেছিলেন তার কারণ তারা প্রকাশ্যে ছবি তুলছিলেন যা untrained বা অদক্ষতার পরিচয়। এরপর তারা পরিচয় দিয়ে দিলেন যেটা উচিত নয় । পুলিশের লোকেরা দিতে পারেন। কিন্তু ইন্টেলিজেন্স এজেন্টদের প্রথমেই তার পরিচয় ও প্রকাশ্যে কাজ করার বিষয়টি পরিহার করা উচিত।