হিমালয়ের দেশ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু ভ্রমণ মনে রাখার মতন ভিন্ন একটি অভিজ্ঞতা হতে পারে । বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে শীতকালে যাওয়াটা সাজেস্টেবল। বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য নেপালে অন এরাইভাল ভিসার সুবিধা রয়েছে বলে সরাসরি কাঠমুন্ডু এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করে ভিসা করা যায়। তাছাড়া এয়ারপোর্টের অফিসাররাও একাজে সহোযোগিতা করেন। এয়ারপোর্টের কিয়স্কের বুথেই ইমিগ্রেশন ভিসার ফর্ম পূরণ করে কাউন্টারে জমা দেয়া মাত্রই অফিসার ভিসা ইস্যু করেন। কোনো ভিসা ফীও নেই। অপরদিকে বাংলাদেশ বিমানের একটি করে ফ্লাইট প্রতিদিন যাওয়া আসা করে। প্রায় এক ঘন্টার মত ফ্লাইট ফ্রম ঢাকা টু নেপাল।
নেপালে গিয়ে কাঠমান্ডুর সেন্ট্রাল এরিয়ায় হোটেলে থাকা যায়। সেন্ট্রালের বাইরেও হোটেল আছে। আগে থেকে বুকিং ডট কম (booking.com), আগোডা (Agoda) এর মতো ঠিক ঠিকানা বিহীন ভন্ড অনলাইন সাইট গুলো থেকে হোটেল বুকিং না দিয়ে কাঠমুন্ডুতে ঘুরে ঘুরে পছন্দমত একটি হোটেলে উঠাই সঠিক কাজ হবে।
প্রথমে মূল কাঠমান্ডুতে দেখার বেশ কিছু স্পট আছে যেমন চন্দ্রগীরি। ওখানে ট্যাক্সি ভাড়া করে যাওয়া যায়। হোটেলের সামনেই ট্যাক্সি থাকে। দামাদামি করে উঠিক করে যাওয়া যায়। আবার হোটেলওয়ালাদের বললেও ওরা ট্যাক্সি ঠিক করে দেয়।
চন্দ্রগিরি আসলে একটি পর্বতসম বড় পাহাড়। মূল আকর্ষণ ক্যাবল রাইড। এরজন্য টিকেট কাটতে হয়। নিচ থেকে ক্যাবল কারে করে পাহাড়ের চূড়ায় উঠা যায়। ওপরে অপূর্ব দৃশ্য। কুয়াশা ঘেরা সারিসারি পাহাড় স্বপ্নময় লাগে। বিশেষ করে দূরের অন্নপুরা পর্বত (Annapurna) চূড়া রেঞ্জের রোমাঞ্চকর দৃশ্য অত্যন্ত ভিন্ন স্বাদের একটি অভিজ্ঞতা দিবে। চনবদ্রীগিরি পাহাড়ে একটি রিসোর্ট আছে। কিন্তু তা ব্যয়বহুল। পাহাড়ের চূড়ায় আবার ছুটো পরিসরে রোপ রাইডিং ভেলী ক্রসিং আছে। তাছাড়া মন্দির, ফাস্ট ফুড শপও আছে। ওখান থেকে নির্দিষ্ট সময়ে চলে আসার বাধকতা নেই। ঘুরে শেষ করে যেকোনো সময় (তবে সন্ধ্যার আগে) ক্যাবল কারে ফিরে আসা যায়। বলাবাহুল্য চন্দ্রগিরিতে ছবি তোলাটা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য একটু দারুন আনন্দের বেপার।
চন্দ্রগিরি থেকে নেমে নেপাল শহরে বেশ কিছু টুরিস্ট স্পট আছে দেখার জন্য। এগুলোর মধ্যে হিন্দু মন্দিরই বেশি। বুদ্ধ মন্দির আছে। উল্লেখযোগ্য টুরিস্ট স্পটগুলো হলো দরবার স্কোয়ার, কাঠমুন্ড রয়েল প্যালেস বা নারায়ণহিটি মিউজিয়াম, স্তূপাস, বৌদ্ধনাথ ও পশুহুপতি মন্দির, পাঠান ও বাখ্তপুর, শম্ভুনাথ, হনুমান দখা ইত্যাদি। যে গাড়ি করে চন্দ্রিগিরি যাওয়া হয়েছিল সেটাই বাড়তি ভাড়ায় এই স্পটগুলোতে নিয়ে যেতে পারবে।
নিরাপত্তার কথা ধরলে বলা যায়, বেশ রাত্রে মানে ১২ টার পর হোটেলের বাইরে ঘুরে ফেরা না করাই নিরাপদ। অন্যদিকে নেপালের লোকেরা টুরিস্টদের পান করে নেয়। তাছাড়া ওখানকার পুরুষ সমাজ নারীদের সম্মানের চোখে দেখে। পার্শবর্তী দেশ যেমন ভারত, বাংলাদেশের চেয়ে ভিন্ন। খারাপ দৃষ্টিতে তাকায়না। ইভটিজিং মাত্রা খুবই কম। এদিক থেকে বলা যায় নেপাল নারী ভ্রমণ বান্ধব।
কাঠমান্ডুতে ভোজনরসিকদের জন্য অনেক ধরণের দেশীয় খাবার পাওয়া যায়। এখানে মম,ভাত বা চাপাতির সাথে সবজি, ছানামাসালা, ছাতামারি, সেলরুটি ও আলুআচার, য়েওমারি, নেওয়ারি খাজা, জূজূ ধাউ, বাফ শুঁটকি বা বাফ স্যুপ ইত্যাদি প্রসিদ্ধ। অন্যদিকে ভেজেটেবলস, রাইস, চাপাতির থালিও বেশ উপভোগ্য। বলাবাহুল্য নেপালের চা অত্যন্ত সুস্বাদু। বিশেষ করে মশলা চা। নেপালের চায়ের স্বাদ চা পিপাসুদের মন কেড়ে নেয়ার মত। যারা চা পছন্দ করেন, তাদের কাঠমুন্ড ভ্রমণে চায়ের স্বাদ এনে দিবে বাড়তি আমেজ।
আনুমানিক কিছু খরচের কথা বলতে হয় যেমন Per Day ট্যাক্সি ভাড়া ৭ হাজার নেপালি রুপি হবে। স্ট্যান্ডার্ড হোটেলের বড় একটি রুম ভাড়া ১২ থেকে ১৫ শত রুপি। রেস্তোরায় Per Meal ৫ থেকে ৬ শত রুপি হবে। আর এয়ারপোর্ট থেকে শহরে ৭ শত রুপি এবং হোটেল থেকে বাসটেন্ড ৩৫০ থেকে ৪০০ রুপির মত পরে। তবে মনে রাখা দরকার উপরের হিসাবটি দূরত্ব, মান, ও পরিমান অনুযায়ী কম বেশি হতে পারে।
কাঠমান্ডু ভ্রমণ শেষ হলে পরবর্তী আকর্ষণ হচ্ছে পোখারা ভ্রমণ যা কাঠমুন্ড থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটারের বেশি পাহাড়ী পথ। পোখারা ভ্রমণ কাঠমান্ডু থেকে বেশ একটু আলাদা এবং ওখানের টুরিজমও ভিন্ন আঙ্গিকে। পোখারা ভ্রমণ পরবর্তী পোস্টে দেয়া হবে ।
Thank you for the information, it will help me to become better in my profession.