- Advertisement -spot_img
Homeইতিহাস ও নিরাপত্তাঢাকায় একাত্তরের ২৫ মার্চের কালো রাতে আক্রমণের কথা কি জানা সম্ভব হতো?

ঢাকায় একাত্তরের ২৫ মার্চের কালো রাতে আক্রমণের কথা কি জানা সম্ভব হতো?

লিখেছেন — Syed Tanvir Yousuf

- Advertisement -spot_img

২৫ মার্চ রাতে যে হামলা Operation Searchlight করা হয়েছিল তা সিকিউরিটি স্টাডিস এর ভাষায় surprise attack বলে l এ ধরণের এটাক গুলো অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে পরিকল্পনা করে প্রস্তুতি নেয়া হয়|

Junta’s forces carried out countless innocent lives in Bangladesh. Photo: Collected

ইতিহাসে দেখা যায় হঠাৎ হামলাগুলি সমাজগুলিকে ডুবিয়ে দিয়েছে এবং সভ্যতাকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। বিস্ময়ের উপাদানটি খুব শক্তিশালী পরিবর্তন এজেন্ট হতে পারে। এবং, সম্ভবত, সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র।ইতহাসের বেশিরভাগ সারপ্রাইস এটাক-ই সফল ছিল l যেমন, ইতিহাসের পাতায় প্রথম গ্রিকরা এ ধরণের কৌশল অবলম্বন করে। সমুদ্র পার হয়ে গ্রিকরা এসেছিলো ট্রয় নগরী জয় করতে, পাশাপাশি Helen কে উদ্ধার করে অপমানের প্রতিশোধ নেয় l কিন্তু গ্রীকরা কোনোক্রমেই ট্রয় সিটির অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারছিলোনা। গ্রীক-ট্রোজান যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে গ্রিক বাহিনী শহরে ভিতরে তাদের সৈন্য পাঠানোর জন্য একটি বৃহৎ আকারের ঘোড়া তৈরী করে l

ঘোড়ার ভিতরে গ্রীক যোদ্ধারা লুকায়। পরদিন বুঝতে না পেরে ট্রয়বাসীরা ঘোড়াটি শহরের ভিতর নিয়ে গেলে রাতের আঁধারের সৈন্যরা ঘোড়ার পেট থেকে বেরিয়ে শহরের প্রধান ফটক খুলে দিলে বাইরে থাকা সমস্ত গ্রিক বাহিনী তাদের সাথে যোগ দিয়ে আশ্চর্য আক্রমণে ট্রোজানদের পরাজিত করে ও সমস্ত শহর জ্বালিয়ে দেয় l কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে হাজার বছরের সমস্ত ট্রোজান সভ্যতা হারিয়ে যায় l পাক বাহিনীও চেয়েছিলো বাঙালি চেতনা ও স্বাধিকারের দাবি নিমিষে শেষ করে দিতে।১৯৬৭ সালের ” 6 Days War”-এ যে surprise attack -এর কারণে হয়েছিল তা ছিল ৫ই জুন সকালে ইস্রায়েলি বীমানগুলোর দ্বারা মিশরের বিমান বাহিনীকে অবাক করে দিয়ে শত শত মিশরীয় বিমান ধ্বংস করে দেয়l

আবার, সম্মিলিত মিশর, জর্দান ও সিরিয়ান বাহিনী দ্বারা ইসরালের উপর ১৯৭৩ সালের রমজান মাসে surprise attack । যার পরিণতিতে ইতিহাসে Yom Kippur war বা Ramadan War হয়েছিল। অতো উন্নত ইসরাইল সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা ডাইরেক্টরেট তথা মোসাদের মতো অত উন্নত গোয়েন্দা সংস্থাও উক্ত পরিকল্পনার কথা ধরতে পারেনি। সারপ্রাইস এটাক প্রস্তুতি কালে ক্যামোফ্লেজ নেয়া হয়, যার জন্য বিপক্ষ শক্তি তা আচ করতে পারেনা। আর এক্ষেত্রে বলতে পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) সে সময় কোনো নিজস্ব গোয়েন্দা বাহিনী ছিলোনা। আর দলীয় কাজে যারা গোপন খবরl খবর আদান প্রদানের দায়িত্বে ছিলেন, তারা পেশাদার সামরিক গোপন তৎপরতার বিষয় স্পট করবে এমন প্রশ্ন করা অবান্তর। তাছাড়া, অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে করা হয় বলে বিপক্ষ শক্তির গোয়েন্দা বাহিনীও তা trace করতে পরেনা। যেমন মিশরীয় বাহিনীর সৈনিকেরা সুয়েজ খালে সামরিক সরঞ্জামাদি এনে এমনভাব করছিলো যেন ইসরালের AIR Reconnaissance মনে করে তা নিয়মিত exercise এর অংশ l[1] এমনকি সৈনিকেরা সুয়েজ খালের পাশে শোয়ে, বসে, কমলা খাচ্ছিলো। তাদের এ অভিনয় ইস্রায়েল ধরতে পারেনি। এমনকি ভনিতা স্বরূপ তারা বড়শি ফেলে সুয়েজ খালে মাছ ধরছিল। উদ্দ্যেশে কিন্তু ছিল অপর পারের উপর চোখ রাখা এবং কম্যান্ড থেকে সংকেত পেলেই তড়িৎগতিতে সিনাই উপত্যাকায় হামলা করা l একই ভনিতl ইয়া হিয়া খান করেছিলেন তৎকালীন বাঙালি নেতৃত্বের সাথে। সে জানতো হামলার নীল নকশা হয়ে গেছে (২২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান GHQ আর্মি স্টাফ মিটিঙে এ হামলার সিদ্ধান্ত হয় এবং ১৮ মার্চ ১৪তম ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল খাদিম হোসাইন রাজা এবং মেজর জেনারেল রায় ফরমান আলী নীল নক্সাটির ড্রাফট চূড়ান্ত করে, লেফটেনেন্ট জেনারেল টিক্কা খান ২০ মার্চ প্লেনটি রিভিউ করে) l এরপর ইয়া হিয়া খান ঢাকায় ৭০এর নির্বাচনের ফলাফল বাস্তন্বয়নের অচলাবস্থা কাটানোর জন্য আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করছিল (উদ্দেশ্য আসলে সৈন্য ও যোদ্ধাস্ত্র পুরো পাকিস্তানে ডেপ্লয়মেন্ট করানোর জন্য সময় অর্জন) l অন্যদিকে প্লাণটি বাস্তবায়নের জন্য সামরিক দিকনির্দেশনা ও তৎপরোতাগুলো লেফটেনেন্ট কর্নেল পর্যায়ে রাখা হয়েছিল যে পর্যন্ত সমস্ত অফিসেরই পাকিস্তানী ছিলেন (একমাত্র বাঙালি উর্ধতন অফিসার ব্রিগেডিয়ার মজুমদার বাদে) ।আর ভারতীয় সামরিক কর্মরতরা এ বিষয়টি কেন জানতে পারেননি তা পরবর্তীকালে জানা যায়নি। সাধারণ ভাবে যেটি ধারণা করা যায় সেটি হচ্ছে সারপ্রাইস এটাকের মূল যে বেপার – অতি গোপনীয়তা – তাতে বোঝা যাচ্ছে এক্ষত্রে পাকিস্তানী সামরিক অফিসাররা সফলভাবেই ভারতীয় ভিজিলেন্স এর অলক্ষে তাদের কাজে সফল হয়েছিল l তাছাড়া আরো একটি সাধারণ বিষয় হলো, ২৫ মার্চের আগে পর্যন্ত এ অঞ্চলের তথা সারা বিশ্বে, এ সংকটের সাথে সম্পর্কিত মানুষ জানতো সংকটটি সবদিক থেকেই রাজনৈতিক। সামরিক বিষয়টি আর সবার মতো ভারতীয় সামরিক ভিজিলেন্সের আওতায় পড়েনি। আর পাকিস্তান থেকে যে 13th Frontier Force আণl হয়েছিল তা ভারতের উপর দিয়ে আনা হয়নি। তারা সামরিক বিমানে করে নয়, বরং পিআইএ ফ্লাইটে শ্রীলংকা হয়ে স্পেশাল পেসেঞ্জার হিসাবে ঢাকায় এসেছিলো। এছাড়া কেউ যেন সন্দেহ না করে এজন্য ইস্ট পাকিস্তান গেরিসনগুলোতে ২৫ মার্চের আগে কোনো ম্যাজোর রেইনফোর্সমেন্ট করা হয়নি। এমনকি যে the 25th Punjab and the 20th Baluch ইউনিট ঢাকায় আসার কথা ছিল তাদের আসা delay করে দেয়া হয়েছিল। তাছাড়া, সর্বশেষ সতর্কতা হিসাবে, সেনসেটিভ পোস্ট থেকে বাঙালি অফিসারদের relocate করা হয়েছিল। অন্যদিকে ভালো পাকিস্তানী সৈন্য যারা বেসামরিক নাগরিক হত্যা পরিকল্পনার বিরুধিতা সাধারণ করেছিল তাদের টিক্কা ও ইয়া হিয়া খান ডিউটি থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলো বা বদলি করে দিয়েছিলো। যেমন : এয়ার কমোডোর মিত্তি মাসুদ, লেফটেন্যান্ট জেনারেল শাহাবজাদা খান, ভাইস এডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ আহসান।

Junta’s militia forces Rajakar, al-badar & Al Shams committed countless innocent lives in Jashore, Bangladesh. Photo: Collected

আর একমাত্র উর্ধতন বাঙ্গলী অফিসার ব্রিগেডিয়ার মজুমদার যিনি চট্টগ্রাম অঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন তিনি বেসামরিক নাগরিকদের উপর গুলি বর্ষণের জন্য চট্টগ্রাম পোর্টে এমভি সোয়াত থেকে সন্দেহজনক অতিরিক্ত সামরিক মালামাল খালাসে বাধা সৃষ্টি করলে তাকে জেনারেল খাদিম জয়দেবপুরে ২ ইবিআর এ বদলি করে দেন l তবে জানা যায় ব্রিগেডিয়ার মজুমদার তৎকালীন আওয়ামীলীগ নেতৃত্বের কাছে বেশ কিছু গোপন তথ্য পাঠান [2] কিন্তু intelligence analyse করলে হয়তো সে তথ্যের অর্থ তিনি নিজেই আওয়ামীলীগ নেতৃত্বকে জানাতে পারতেন। অন্যদিকে তৎকালীন আওয়ামীলীগে তথ্য বিশ্লেষক না থাকায় সে গোপন তথ্যগুলোর outcome মানে ইন্টেলিজেন্স প্রোডাক্ট বের করা সম্ভব হয়নি, ওয়ার্নিং তৈরী করার মতো সে সময় লোকাল কাঠামো ছিলনা বলেই ধারণা করা যায়।

এবার আসি সাধারণ বাঙালি সৈনিকদের কথায়। প্রথমত সাধারণ সৈনিকদের এ ধরণের উচ্চ পর্যায়ের গোপন পরিকল্পনা জানার কথানা l এরপর ২৫ মার্চ হামলার প্রতিক্রিয়ায় তারা যেন প্রতিরোধ বা পাল্টা জবাব নিতে না পারে, সেজন্য নীল-নক্সায় একটি পয়েন্ট ছিল যে তাদেরকে ২৫ মার্চ হামলার অংশ হিসাবে হামলার জন্য যে সময়টা বেঁচে নেয়া হয়েছিল ওই একই সময়ে তাদেরকে নিরস্ত্র করা হবে l সাধারণ সৈনিক বাহিনীর মধ্যে ছিল ছয়টি নিয়মিত আর্মি বাঙ্গালী পদাতিক রেজিমেন্ট, প্রায় ৩৩ হাজারের মতো ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ বাহিনী যেখানে বেশিরভাগই বাঙালি ছিলেন, প্রায় ১৫ হাজার সদস্যের ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস যার ৮০ ভাগই ছিলেন বাঙালি, এছাড়া ছিল হাজার খানেক স্বদেশের আনসার বাহিনী।

পরিকল্পনা মাফিক ২৫ মার্চ কালো রাতের শেষ প্রহরে এক যোগে ঢাকাসহ বাংলাদেশের বৃহৎ জেলাগুলোতে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী নিরীহ নিরস্ত্র জনতার উপর অকস্যাৎ হামলা করে ও উপরেউল্লেখিত সাধারণ বাহিনীগুলোর সদস্যদের নিরশ্ত্র করে l পরিকল্পনার অর্ডার পয়েন্ট অনুযায়ী কেউ প্রতিক্রিয়া দেখালে তাদের উপর গুলিবর্ষণ করে অকেজো করে দেয়া হয়।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe

Must Read

- Advertisement -spot_img

Related News

- Advertisement -spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here